ঢাকা | বঙ্গাব্দ |

বদলির পরেও বহাল তবিয়তে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 29, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:
ad728
আউটসোর্সিংয়ে কর্মী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) করা হলেও পুরনো কর্মস্থলেই বহাল তবিয়তে অফিস করছেন ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মহসীন আলী।

গত ১৫ মে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে বদলি করে দুই কর্মদিবসের মধ্যে কর্মস্থল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘অনুরোধে’ ঠাকুরগাঁওয়েই নিয়মিত অফিস করছেন।

একজন কর্মচারীর এমন দাপুটে আচরণ এবং সরকারি আদেশ অমান্য করার ঘটনায় জেলার সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।


তাদের আশঙ্কা, এতে শুধু ক্ষমতার অপব্যবহারই হচ্ছে না, বরং নির্বাচন অফিসের মতো একটি সংবেদনশীল দপ্তরের গোপনীয়তাও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
১৫ মে বদলির আদেশ জারির পর মহসীন আলী ২৫ মে অনলাইনে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে যোগদান করেন। কিন্তু এরপরই ‘পারিবারিক কারণ’ দেখিয়ে এক মাসের ছুটিতে চলে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বলেন, ‘মহসীন আলী অনলাইনে আমাদের এখানে যোগদান করেছেন।


কিন্তু এরপর পারিবারিক কারণে এক মাসের ছুটিতে আছেন। তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহসীন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ দীর্ঘ। তিনি ঠাকুরগাঁও শহরে হাজীপাড়ায় পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের একটি বাড়ির মালিক।


গ্রামেও রয়েছে কয়েক একর জমি। আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন এই সম্পদের পাশাপাশি তিনি অফিসের গুদাম ঘরের ঠিকাদার বানিয়েছেন নিজের স্ত্রী ফারজিনা ইসলামকে।
ফারজিনা ইসলাম সদর উপজেলার বড়গাঁও আলিম মাদরাসার একজন সহকারী শিক্ষিকা। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, একজন সরকারি চাকরিজীবী বা তার পরিবারের সদস্য নিজ দপ্তরের ঠিকাদারি কাজে যুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মহসীন তার নিজের বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নির্বাচন অফিসের গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন এবং স্ত্রীকেই এর ঠিকাদার দেখিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার বলেন, ‘একজন সরকারি শিক্ষিকা হয়ে তিনি কোনো দপ্তরের ঠিকাদার হতে পারেন না। এটি সম্পূর্ণ নিয়ম পরিপন্থী। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
 
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহসীন আলী অকপটে স্বীকার করেন যে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুরোধেই ঠাকুরগাঁও অফিসে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘স্যার (জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) আমাকে জুন ক্লোজিং পর্যন্ত থাকতে বলেছেন, তাই অফিস করছি।’

এদিকে, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুন্জুরুল হাসানের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। গুদামের ভাড়ার টাকা থেকে কমিশন নেওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন ও বিতরণে কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে আর্থিক লেনদেন এবং সদ্য সাবেক হওয়া সরকারের আমলে বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মহসীন আলীকে কেন ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুন্জুরুল হাসান বলেন, ‘জুন ক্লোজিংয়ের অনেক কাজ বাকি। তাই তাকে আপাতত কাজ করতে বলা হয়েছে। কাজ শেষ হলে তিনি চলে যাবেন।’

ঠাকুরগাঁওয়ের নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিউল ফারুক রোমেল চৌধুরী এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন কর্মচারী বদলির আদেশ পাওয়ার পরও কীভাবে পুরনো অফিসে ক্ষমতার দাপট দেখায়? এটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মদদ ছাড়া সম্ভব নয়। এতে অফিসের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে এবং নির্বাচন অফিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা ও ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আমরা অবিলম্বে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত কর্মচারীর যোগসাজশেই সরকারি আদেশকে পাশ কাটানোর এই অপচেষ্টা চলছে, যা প্রশাসনের জন্য একটি অশনিসংকেত।



নিউজটি আপডেট করেছেন : Talha


কমেন্ট বক্স