ঢাকা | বঙ্গাব্দ |

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘গুপ্ত রাজনীতি’ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে : তারেক রহমান

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Nov 8, 2025 ইং
সবুজ বাংলাদেশ ছবির ক্যাপশন: সবুজ বাংলাদেশ
ad728

দেশ অস্থিতিশীল হলে পরাজিত, পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘গুপ্ত রাজনীতি’ সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। অবশ্যই কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়।

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আয়োজনে ‘হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন-২০২৫’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ফ্যাসিবাদের রোষানল থেকে বাঁচতে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের কেউ কেউ ‘গুপ্ত কৌশল’ অবলম্বন করেছিল।’ একইভাবে পতিত-পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও বর্তমানে ‘গুপ্ত কৌশল’ অবলম্বন করে দেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে কি না, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান রাখছেন।ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গী কারো কারো ভূমিকা দেশে ‘আপনার, আমার, আমাদের’ বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগকে বিনষ্ট করার হয়তো একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।পতিত ও পলাতক অপশক্তিকে কোনো সুযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘গুপ্ত বাহিনীর সেই অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে, একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় ও বহাল রাখা।’ সে জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গীদের সহযোগিতা ও সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি বরাবরই ‘একটি শান্তিকামী, সহনশীল, গণমুখী’ রাজনৈতিক দল বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ভিন্ন দল, ভিন্ন মতের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা, এটি বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।

দেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই বিএনপির রাজনীতি বলেও দাবি করেন তিনি।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ যেন নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে। সে ব্যাপারে আপনারা দয়া করে সজাগ এবং সতর্ক থাকবেন। নিজেদেরকে অবশ্যই সংখ্যালঘু ভাববেন না। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই স্বাধীন বাংলাদেশে আপনার, আমার এবং আমাদের সবার অধিকার সমান।

ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থ নয়। বিএনপির কাছে অবশ্যই দেশ এবং জনগণের স্বার্থই সবচেয়ে অগ্রাধিকার। এজন্যই কিন্তু আমরা একটি কথা বলি। আমার আগে আমরা, আমাদের আগে দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ। 

তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের সময়কালে দেশের সবচেয়ে জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়া সত্ত্বেও সারাদেশে আমরা যদি দেখি, তাহলে দেখব, সারাদেশে শুধুমাত্র বিএনপিরই ৫০ লাখ বা তারও কিছু বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে দেড় লাখ মামলা করা হয়েছিল সেদিন। 

সাতশ’র বেশি নেতাকর্মীকে ঘুম, অপহরণ ও খুন করা হয়েছিল। অকারণে রাতের বেলায় আদালতে বসিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সেদিন রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। মূল কারণ ছিল দেশে আইনের শাসন ছিল না সেদিন। 

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে মুসলমান কিংবা হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান, ডান কিংবা বাম, বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসী, ভিন্ন দল মতের কেউই সেদিন নিরাপদ ছিল না। ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা কিংবা ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যে হামলা হয়েছিল, সে হামলাসহ দেশের কোথাও কোন একটি হামলারও সেদিন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি বা বিচার হয়নি। গত দেড় দশকে আমি এবং আমার নেতারা, আমরা বিভিন্ন বক্তব্যে দেশের সুশীল সমাজ, সর্বদলীয় এবং সর্বধর্মীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয় একটি নাগরিক তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাসাবাড়ি কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয়ে যে সংগঠিত, যে অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল- প্রতিটি হামলার নেপথ্য ঘটনা উদ্ঘাটন করে সুষ্ঠ বিচারের দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে দাবিগুলো একটিও সেভাবে বিচার কমিশন গঠন হয়নি কিংবা বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত সেদিন করা হয়নি। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি মনে করে, দেশের ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু কোনো নাগরিকেরই নিরাপত্তার গ্যারান্টি হতে পারে না। একমাত্র ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দল-মত-ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয় শেষে একমাত্র আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারী দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রতিটি ধর্মের, প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ও গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিশাল সুযোগ অপেক্ষমাণ। ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলনে, আমাদের রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গী কারও কারও ভূমিকা দেশে আপনার, আমার এবং আমাদের বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগকে বিনষ্ট করার হয়ত একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশ যদি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে তাহলে পতিত, পরাজিত এবং পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে বা হয়। ফ্যাসিবাদ শাসন আমলে, ফ্যাসিবাদের রোশানল থেকে বাঁচতে, ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের কেউ কেউ যে উপায়ে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করেছিল। পতিত ও পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও বর্তমানে একইভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে দেশকে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে কিনা, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পতিত, পরাজিত, পলাতক অপশক্তি কোনো দলের আড়ালে গুপ্ত কৌশলে ভূমিকা রেখে যাতে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার সুযোগ না পায়। গুপ্ত বাহিনীর সেই অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে, একটি ফ্যাসিবাদেবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় এবং বহাল রাখা। এ কারণেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার এবং ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জনগণের রায় বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সরকার থেকে সহযোগিতা করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ পরিবারের নারী প্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা করছে। ঠিক একইভাবে ঠিক একইভাবে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মাঝারী কৃষক যারা আছেন, সেই কৃষকদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে যাতে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েতে পারেন, সেজন্য তাদেরকে ফার্মাস কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, এই বেকারত্ব সমস্যাকে অ্যাড্রেস করার জন্য, বেকার তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য, তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভাষা শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তি রূপান্তর করায় দেশে এবং বিদেশে কাজের ব্যবস্থার পরিকল্পনা আমরা এরই ভিতরে হাতে নিয়েছি। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রতি বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য একটি সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আপনার এবং আপনাদের সকলের সমর্থন প্রার্থনা প্রত্যাশা করছে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Talha


কমেন্ট বক্স