এস এম মিলন স্টাফ রিপোর্টারঃ
মধুমতি নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের পার-আমডাঙ্গা গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। গত ৪০ দিনে এসব পরিবারের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। এসব পরিবারের সদস্যদের অনেকে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
কথাগুলো বললেন,৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম (৬৫)। তিনি আরও বলেন, ‘জয়পুর ইউনিয়নের আমডাঙ্গা ও পার-আমডাঙ্গা গ্রাম নিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। মধুমতি নদীর তীরের আমডাঙ্গা গ্রাম বছরের পর বছর ধরে ভাঙনের শিকার হয়। নদীর এ পাড়ের গ্রামটি ভাঙতে ভাঙতে অন্যপাড়ে চর জেগে উঠে। সেই চরের নামকরণ করা হয় পার-আমডাঙ্গা। বর্তমানে গ্রামটির মসজিদ-মাদরাসা,কবরস্থান,ফসলি জমি, গাছপালা নদীতে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এক সময় নড়াইল জেলার ম্যাপ থেকে পার-আমডাঙ্গা গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে।’তিনি আরও বলেন,‘এই ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ছিল সাড়ে ৫ হাজার। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে বর্তমানে এই ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮২ জনে।’
বুধবার(১০সেপ্টেম্বর)সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,নদীভাঙনের মুখে পড়েছে পারআমডাঙ্গা গ্রামের অসিম মিয়ার বসতবাড়ি। ভোরবেলা থেকে তার বাড়িতে ভাঙন শুরু হয়। তার পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা বসতঘর খুলে সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত। অসিম মিয়া পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন ‘ইতোমধ্যে আমার সব জায়গা-জমি নদীতে চলে গেছে। এখন চেষ্টা করছি ঘর খুলে নেওয়ার। লক্ষাধিক টাকার গাছ নদীতে ভেসে গেছে। আমার আর কোনো জমি-জমা নেই। কীভাবে চলবে বাকি জীবন, তা নিয়ে চিন্তিত।’একই গ্রামের শহিদা বেগম বলেন,‘দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
মোহাম্মদ হোসেন বলেন,‘ইতোমধ্যে এই গ্রামের দুটি মসজিদ দুটি কবরস্থানসহ বহু মানুষের বাড়িঘর,জায়গা-জমি নদীতে চলে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে কয়েক শ পরিবার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা ও আশ্রয়ণ প্রকল্প।’ রতœা বেগম বলেন,‘ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ নয়, স্থায়ী তীররক্ষা বাঁধ দেওয়া দরকার।’বাবু মিয়া বলেন,‘প্রতিবছরই নদীভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভাঙন রোধে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।’
জানা গেছে, এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই মধুমতীর ভাঙন চলছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। চোখের পলকেই গিলে খাচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি, জমি,স্কুল, মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙনে অসহায় হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার মধুমতির তীরবর্তী শিয়েরবর, মন্ডলভাগ, মাকড়াইল,গোপালপুর খেয়াঘাট, রামকান্তপুর,দক্ষিণ রামকান্তপুর, মচন্দ্রপুর, আমডাঙ্গা,কাশিপুর, আন্তাইল, ধানাইড়,করগাতি, ইতনা, লংকারচর, ডিগ্রিরচর, তেলকাড়া, মঙ্গলপুরসহ ৪৫টি গ্রামে মধুমতির ভাঙন রয়েছে কয়েক দশক ধরে। উন্নয়ন বোর্ড। গত তিন বছরে ভাঙন রোধে পাউবো প্রায় সাড়ে ৫ কিমি এলাকায় কাজ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা।
নড়াইল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন,‘ভাঙন রোধে সীমিত বরাদ্দ দিয়েই জনপদ আর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। জেলার ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ১৩ কিমি অংশে আনুমানিক ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’