ঢাকা | বঙ্গাব্দ |

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলো ভূমি দিক: হাকাবি

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 11, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:
ad728
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য মুসলিম ‘দেশগুলো’ তাদের কিছু জমি ছেড়ে দিতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে কিছু ভূমি ছেড়ে দেওয়া উচিত।’ 

সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েলের চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি জমি রয়েছে।


তাই যদি সত্যিই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ইচ্ছা থাকে, তাহলে কেউ হয়তো বলবে—আমরা এটা [রাষ্ট্র] আমাদের এখানে গড়ে তুলতে পারি।'
সম্প্রতি দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে বারবার সহিংস উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে দুই কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় হাকাবি মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন। 

সাক্ষাৎকারে হাকাবি আরো বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে বহুল আলোচিত ‘দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ কেবল একটি ‘আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য’। এই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়, যা ইসরায়েলের পাশে সহাবস্থান করবে।


বহু মার্কিন প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিকল্পনার পক্ষে।
তবে ব্লুমবার্গকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে হাকাবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আর কাজ করছে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস পরে জানান, রাষ্ট্রদূত হাকাবির বক্তব্য তার ব্যক্তিগত মত এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সিদ্ধান্ত দেন প্রেসিডেন্ট।

এই মাসের শেষদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে একটি সম্মেলন বসবে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের রোডম্যাপ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।


তবে হাকাবি এই সম্মেলনকে ‘অপ্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী নয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘একটি যুদ্ধে জর্জরিত অবস্থায় ইউরোপীয় দেশগুলোর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত, যা ইসরায়েলকে আরো অনিরাপদ করে তুলবে।’

বিবিসি’র নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি আলো প্রশ্ন তোলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একই জমিতেই কেন জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে এখন ইসরায়েল রয়েছে?’ তার মতে, ‘এই প্রশ্নটা তাদের কাছে তোলা উচিত, যারা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে কথা বলছেন।’

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হওয়া উচিত কি না—এমন প্রশ্নে হাকাবি বলেন, ‘আমি বলব না যে তা কখনোই হতে পারে না। তবে সংস্কৃতি বদলাতে হবে।

বর্তমানে যে সংস্কৃতি চলছে, সেখানে ইহুদিদের হত্যা করা বৈধ মনে করা হয় এবং তা পুরস্কৃতও হয়। এটা বদলাতে হবে।’
ইসরায়েল দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে প্রত্যাখ্যান করে। তাদের মতে, কোনো চূড়ান্ত সমাধান কেবল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই আসতে পারে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আগে থেকেই চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

রাষ্ট্রদূত হাকাবি দীর্ঘদিন ধরে ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণার প্রবল সমর্থক। তিনি দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি কর্তৃত্ব বজায় রাখার পক্ষে এবং পশ্চিম তীরের জন্য বাইবেলীয় শব্দ ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ ব্যবহার করে থাকেন।

তার অনেক বক্তব্য ইসরায়েলের উগ্র-জাতীয়তাবাদী দলগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। এই মতবাদের অনুসারীরা (যাদের মধ্যে ইসরায়েল সরকারের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরাও রয়েছেন) দাবি করে থাকেন যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র আরব বা মুসলিম দেশগুলোতেই গঠিত হতে পারে। এই ধরনের নীতি বাস্তবায়িত হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থা ও ইউরোপীয় সরকারগুলো।

নিষেধাজ্ঞা 'চমকে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত'

ইতামার বেন-গভির এবং বেজালেল স্মোটরিচ-এর ওপর যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, এই দুই মন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে ও চরমপন্থী সহিংসতা উস্কাতে ভূমিকা রেখেছেন।

তাদেরকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাজ্যে থাকা যেকোনো সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে এবং হাকাবি এটিকে ‘চমকে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এখনও এমন কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনিনি, কেন একটি সার্বভৌম দেশের নির্বাচিত দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত নন।’

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৯২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, নিহতদের অন্তত এক-চতুর্থাংশই শিশু।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি আপডেট করেছেন : Talha


কমেন্ট বক্স